Tuesday, 9 October 2018
গম্ভীর রানীর গল্প
গম্ভীর রানীর গল্প
অনেক দিন আগের কথা, চীন দেশে ছিল এক রাজা। রাজার হাতিশালে হাতি, ঘোড়াশালে ঘো্ড়া, রাজ্যজুড়ে সুখ আর শান্তি। রাজার প্রজা প্রতিপত্তি সব ছিল। ছিল না শুধু মনে সুখ। রাজার খালি থেকে থেকে বড় একা লাগত। আসলে সেই দেশের রাজার সব ছিল, ছিল না শুধু এক রানী। তাই এই মনের অসুখ। একদিন রাজা ঠিক করলেন যে তাঁর সৈন্য-সামন্তদের নিয়ে যাবেন রানীর সন্ধানে। যেমনটি ভাবা তেমনটি কাজ। রাজা তাঁর সব চেয়ে তেজী ঘোড়াটা আর তাঁর সাতজন সবচেয়ে বিশ্বাসী আর বলিষ্ঠ সৈন্যদের নিয়ে বেরিয়ে পরলেন রানীর সন্ধানে, দেশ থেকে দেশান্তরে। নানান দেশে যান। কত দেশের কত সুন্দরী রাজকন্যে। তাদের নানান গুণ। কিন্তু রাজার মন ভরে না। কোথাই সেই মেয়ে যে রাজার মনে এনে দেবে দু দণ্ডের শান্তি, সেই সুখ। একদিন রাজা তাঁর সৈন্যসামন্তদের নিয়ে এসে পৌঁছলেন এক হ্রদের তীরে। সন্ধ্যা নেমে আসছিল, তাই তিনি ঠিক করলেন রাতটা এখানেই থেকে যাবেন। সৈন্যদের ডেকে তিনি আদেশ দিলেন হ্রদের ধারে তাঁবু খাটাতে। রাত্রে খাবার আয়োজন চলছে, এমন সময় রাজার কানে এল এক অদ্ভুত সুন্দর সুর। রাজা সেই সুরের খোঁজে হ্রদের কাছে এসে দেখলেন একটি মেয়ে চাঁদনী আলোয় হ্রদের মধ্যে ছোটো এক নৌকা বিহার করছে । চাঁদের আলোয় সেই মেয়ের অপূর্ব মায়াবী মুখখানি দেখে রাজার বুকে অচেনা এক ঢেউ চলকে উঠল। যেন এই মেয়েকেই তিনি খুঁজে চলেছিলেন এতদিন। এই মেয়েটিই গাইছে সেই অদ্ভুত মিষ্টি গান। রাজা তাঁর সৈন্যসামন্তদের ডেকে বললেন, মেয়েটিকে ডেকে আনতে।
নৌকাটি তীরে এসে পৌছল। রাজা মেয়েটিকে হাত ধরে নিয়ে এলেন পাড়ে, নিমন্ত্রণ জানালেন তাঁর সাথে নৈশভোজের। মেয়েটি সেই নিমন্ত্রণ গ্রহণ করে রাজার সাথে তাঁর তাঁবুতে এসে বসল। রাজা নানান কথার মাঝে তাকে তাঁর ভাললাগার কথা বললেন। বললেন তাকে তাঁর রানী করে দেশে নিয়ে যেতে চান। মেয়েটি শুনে জিজ্ঞেস করল তিনি তো তাকে আজই প্রথম দেখলেন, তাকে ঠিক মত চেনেনও না, তবে কেন তাকেই রানী করতে চান? সেই শুনে রাজা মেয়েটি কে সব খুলে বললেন। এও বললেন তিনি বহু দিন ধরে তারই মতো কাউকে খুঁজে চলেছিলেন দেশ-বিদেশে। রাজা তাকে আসস্ত্ব করলেন তিনি তাঁর সবটুকু ভালোবাসা দিয়ে তাকে ভরিয়ে রাখবেন। তার সমস্ত সুখের খেয়াল রাখবেন। সেই শুনে মেয়েটি তাঁর প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়ে তাঁকে বিয়ে করতে রাজি হল। রাজার আনন্দ আর ধরে না। পরদিন ভোরবেলা তিনি তাঁর সৈন্যসামন্তদের নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন তাঁর রাজধানীর পথে। কিন্তু এতো কথার মাঝে রাজা তো ভুলেই গেছেন মেয়েটির নাম জিজ্ঞেস করতে। রাজা জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার নাম কি?” মেয়েটি জানালো তার নাম জীনা। সে নানান দেশ এ ঘুরে এখানে এসেছে। কিন্তু এর বেশি সে আর কোন কোথাই বলল না। রাজা লক্ষ্য করলেন জীনা চুপচাপ। তেমন কোন কোথাই বলছে না। রাজা তাঁকে তার বিশণ্ণতার কথা জিজ্ঞেস করতে সে বলল “চিন্তার কিছু নেই, সব ঠিক হয়ে যাবে”।
রাজা ফিরে এলেন দেশে। বিয়ে করলেন তাঁর বহু আকাঙ্ক্ষিত সেই মেয়েটিকে। দেশ জুড়ে তিনদিন ধরে চললো আনন্দের উৎসব। সবাই ভীষণ খুশী নতুন রানীকে পেয়ে। নানান রঙে নানান খুশীতে ভরে উঠল রাজার মন। কিন্তু হায়...রানীর মুখে কোথাও হাসির দেখা নাই। রানী তাঁর সব কর্তব্য সব দায়িত্ব নিপুণ হাতে নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। রানীকে পেয়ে রাজ্যের সব প্রজা ভীষণ খুশী। কিন্তু, রানীর মুখে এক অদ্ভুত বিশণ্ণতা। রানীকে রাজা বহুবার জিজ্ঞেস করেছেন, তাঁর কি এই প্রাসাদে কোন অসুবিধা বা মনে কোন দুঃখ আছে কিনা। রানী তাঁর কোন উত্তরই দেন না। চুপ থাকেন।
রাজা তাঁর রানীর মুখে হাসি ফোটানোর জন্যে কতকিছু করলেন, কত ভেলকিবাজি কত মশকরা দেখালেন, কিন্তু রানীর মুখে হাসি নেই। রাজার কোন পন্থাই কাজে দিল না রানীর মুখে হাসি ফটাতে। একদিন রাজার মাথায় এক অভিনব পন্থা এল রানীর মুখে হাসি আনার। তিনি তাঁর সবছেয়ে বিস্বস্ত্ব উপদেষ্টাকে ডেকে বললেন সন্ধ্যেবেলা তিনি যখন তাঁর নিজের কক্ষে থাকবেন রানীর সাথে তখন সে যেন এসে বলে বিদেশী সৈন্যরা এসে দরজায় উপস্থিত, তাঁর প্রাসাদ দখল হতে চলেছে।
সেইদিন নৈশভোজের পর রাজা তাঁর রানীকে নিয়ে তাঁর শয়নকক্ষে ছিলেন। রাজা তাঁর পালঙ্কে বসে হস্তাঙ্কন অভ্যাস করছিলেন আর রানী তাঁর এলো চুল আঁচড়াচ্ছিলেন। সেই সময় তাঁর পারিষদ দৌড়োতে দৌড়াতে এসে বলল –
“মহারাজ, বিদেশী সৈন্যরা এসে প্রাসাদের দরজায় প্রাসাদ দখল করতে এসেছে, তাড়াতাড়ি চলুন।” এই শুনে রাজা তাড়াহুড়ো করে পালঙ্ক থেকে ঊঠতে গেলে তাঁর দোয়াত ঊল্টে সমস্ত কালি চোখেমুখে লেগে গেল। তাই দেখে রাণী হাসিতে ফেটে পরলেন। রাজা রাণীর এই হাসি দেখে আনন্দে লাফালাফী করতে লাগলেন। অবশেষে তাঁর পন্থা কাজে দিয়েছে। তিনি রাণীকে সব খুলে বললেন যে তিনি তাঁর মূখে হাসি ফোটানোর জন্যে এই কীর্তি করেছেন। সেই শুনে রাণী দ্বিগুণ হাসিতে ফেটে পরলেন।
কিন্তু পরদিন রাণীর মুখে আবার সেই বিষণ্ণতা ফিরে এলো। রাণীর মুখে হাসি আবার কোথাই হারিয়ে গেল। রাজা ভাবলেন রাণীর...... পরবর্তী গল্পটির এর জন্যে এখানেhttps://m.facebook.com/Rupkotha.golpokotha2017/?ref=bookmarks click করু।
অনেক দিন আগের কথা, চীন দেশে ছিল এক রাজা। রাজার হাতিশালে হাতি, ঘোড়াশালে ঘো্ড়া, রাজ্যজুড়ে সুখ আর শান্তি। রাজার প্রজা প্রতিপত্তি সব ছিল। ছিল না শুধু মনে সুখ। রাজার খালি থেকে থেকে বড় একা লাগত। আসলে সেই দেশের রাজার সব ছিল, ছিল না শুধু এক রানী। তাই এই মনের অসুখ। একদিন রাজা ঠিক করলেন যে তাঁর সৈন্য-সামন্তদের নিয়ে যাবেন রানীর সন্ধানে। যেমনটি ভাবা তেমনটি কাজ। রাজা তাঁর সব চেয়ে তেজী ঘোড়াটা আর তাঁর সাতজন সবচেয়ে বিশ্বাসী আর বলিষ্ঠ সৈন্যদের নিয়ে বেরিয়ে পরলেন রানীর সন্ধানে, দেশ থেকে দেশান্তরে। নানান দেশে যান। কত দেশের কত সুন্দরী রাজকন্যে। তাদের নানান গুণ। কিন্তু রাজার মন ভরে না। কোথাই সেই মেয়ে যে রাজার মনে এনে দেবে দু দণ্ডের শান্তি, সেই সুখ। একদিন রাজা তাঁর সৈন্যসামন্তদের নিয়ে এসে পৌঁছলেন এক হ্রদের তীরে। সন্ধ্যা নেমে আসছিল, তাই তিনি ঠিক করলেন রাতটা এখানেই থেকে যাবেন। সৈন্যদের ডেকে তিনি আদেশ দিলেন হ্রদের ধারে তাঁবু খাটাতে। রাত্রে খাবার আয়োজন চলছে, এমন সময় রাজার কানে এল এক অদ্ভুত সুন্দর সুর। রাজা সেই সুরের খোঁজে হ্রদের কাছে এসে দেখলেন একটি মেয়ে চাঁদনী আলোয় হ্রদের মধ্যে ছোটো এক নৌকা বিহার করছে । চাঁদের আলোয় সেই মেয়ের অপূর্ব মায়াবী মুখখানি দেখে রাজার বুকে অচেনা এক ঢেউ চলকে উঠল। যেন এই মেয়েকেই তিনি খুঁজে চলেছিলেন এতদিন। এই মেয়েটিই গাইছে সেই অদ্ভুত মিষ্টি গান। রাজা তাঁর সৈন্যসামন্তদের ডেকে বললেন, মেয়েটিকে ডেকে আনতে।
নৌকাটি তীরে এসে পৌছল। রাজা মেয়েটিকে হাত ধরে নিয়ে এলেন পাড়ে, নিমন্ত্রণ জানালেন তাঁর সাথে নৈশভোজের। মেয়েটি সেই নিমন্ত্রণ গ্রহণ করে রাজার সাথে তাঁর তাঁবুতে এসে বসল। রাজা নানান কথার মাঝে তাকে তাঁর ভাললাগার কথা বললেন। বললেন তাকে তাঁর রানী করে দেশে নিয়ে যেতে চান। মেয়েটি শুনে জিজ্ঞেস করল তিনি তো তাকে আজই প্রথম দেখলেন, তাকে ঠিক মত চেনেনও না, তবে কেন তাকেই রানী করতে চান? সেই শুনে রাজা মেয়েটি কে সব খুলে বললেন। এও বললেন তিনি বহু দিন ধরে তারই মতো কাউকে খুঁজে চলেছিলেন দেশ-বিদেশে। রাজা তাকে আসস্ত্ব করলেন তিনি তাঁর সবটুকু ভালোবাসা দিয়ে তাকে ভরিয়ে রাখবেন। তার সমস্ত সুখের খেয়াল রাখবেন। সেই শুনে মেয়েটি তাঁর প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়ে তাঁকে বিয়ে করতে রাজি হল। রাজার আনন্দ আর ধরে না। পরদিন ভোরবেলা তিনি তাঁর সৈন্যসামন্তদের নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন তাঁর রাজধানীর পথে। কিন্তু এতো কথার মাঝে রাজা তো ভুলেই গেছেন মেয়েটির নাম জিজ্ঞেস করতে। রাজা জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার নাম কি?” মেয়েটি জানালো তার নাম জীনা। সে নানান দেশ এ ঘুরে এখানে এসেছে। কিন্তু এর বেশি সে আর কোন কোথাই বলল না। রাজা লক্ষ্য করলেন জীনা চুপচাপ। তেমন কোন কোথাই বলছে না। রাজা তাঁকে তার বিশণ্ণতার কথা জিজ্ঞেস করতে সে বলল “চিন্তার কিছু নেই, সব ঠিক হয়ে যাবে”।
রাজা ফিরে এলেন দেশে। বিয়ে করলেন তাঁর বহু আকাঙ্ক্ষিত সেই মেয়েটিকে। দেশ জুড়ে তিনদিন ধরে চললো আনন্দের উৎসব। সবাই ভীষণ খুশী নতুন রানীকে পেয়ে। নানান রঙে নানান খুশীতে ভরে উঠল রাজার মন। কিন্তু হায়...রানীর মুখে কোথাও হাসির দেখা নাই। রানী তাঁর সব কর্তব্য সব দায়িত্ব নিপুণ হাতে নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। রানীকে পেয়ে রাজ্যের সব প্রজা ভীষণ খুশী। কিন্তু, রানীর মুখে এক অদ্ভুত বিশণ্ণতা। রানীকে রাজা বহুবার জিজ্ঞেস করেছেন, তাঁর কি এই প্রাসাদে কোন অসুবিধা বা মনে কোন দুঃখ আছে কিনা। রানী তাঁর কোন উত্তরই দেন না। চুপ থাকেন।
রাজা তাঁর রানীর মুখে হাসি ফোটানোর জন্যে কতকিছু করলেন, কত ভেলকিবাজি কত মশকরা দেখালেন, কিন্তু রানীর মুখে হাসি নেই। রাজার কোন পন্থাই কাজে দিল না রানীর মুখে হাসি ফটাতে। একদিন রাজার মাথায় এক অভিনব পন্থা এল রানীর মুখে হাসি আনার। তিনি তাঁর সবছেয়ে বিস্বস্ত্ব উপদেষ্টাকে ডেকে বললেন সন্ধ্যেবেলা তিনি যখন তাঁর নিজের কক্ষে থাকবেন রানীর সাথে তখন সে যেন এসে বলে বিদেশী সৈন্যরা এসে দরজায় উপস্থিত, তাঁর প্রাসাদ দখল হতে চলেছে।
সেইদিন নৈশভোজের পর রাজা তাঁর রানীকে নিয়ে তাঁর শয়নকক্ষে ছিলেন। রাজা তাঁর পালঙ্কে বসে হস্তাঙ্কন অভ্যাস করছিলেন আর রানী তাঁর এলো চুল আঁচড়াচ্ছিলেন। সেই সময় তাঁর পারিষদ দৌড়োতে দৌড়াতে এসে বলল –
“মহারাজ, বিদেশী সৈন্যরা এসে প্রাসাদের দরজায় প্রাসাদ দখল করতে এসেছে, তাড়াতাড়ি চলুন।” এই শুনে রাজা তাড়াহুড়ো করে পালঙ্ক থেকে ঊঠতে গেলে তাঁর দোয়াত ঊল্টে সমস্ত কালি চোখেমুখে লেগে গেল। তাই দেখে রাণী হাসিতে ফেটে পরলেন। রাজা রাণীর এই হাসি দেখে আনন্দে লাফালাফী করতে লাগলেন। অবশেষে তাঁর পন্থা কাজে দিয়েছে। তিনি রাণীকে সব খুলে বললেন যে তিনি তাঁর মূখে হাসি ফোটানোর জন্যে এই কীর্তি করেছেন। সেই শুনে রাণী দ্বিগুণ হাসিতে ফেটে পরলেন।
কিন্তু পরদিন রাণীর মুখে আবার সেই বিষণ্ণতা ফিরে এলো। রাণীর মুখে হাসি আবার কোথাই হারিয়ে গেল। রাজা ভাবলেন রাণীর...... পরবর্তী গল্পটির এর জন্যে এখানেhttps://m.facebook.com/Rupkotha.golpokotha2017/?ref=bookmarks click করু।
Sunday, 7 October 2018
রাখাল ও পরীর গল্প
রাখাল ও পরীর গল্প
(১)
চারিদিকে পাহাড় ঘেরা উপত্যকার মাঝে ছিল অপূর্ব সুন্দর এক সরোবর। স্বর্গও লজ্জা পায় এমন সুন্দর পরিবেশ সেখানে। সেই সরোবরের তীরে প্রতি বছর গ্রীষ্মকালে বেড়াতে আসে সাত পরী, সাত বোন। তারা ডানাগুলো একটা গাছের তলায় রেখে আনন্দ করে জলে খেলে বেড়ায়। জনশূন্য চারপাশ। ঠিক সাতদিন ধরে আনন্দ করে আবার ডানাগুলো পরে উড়ে যায় নন্দনকাননে, তাদের নিজের দেশে।
এদিকে কাছাকাছি যে কিছু গ্রাম আছে সে খবর তারা না রাখলেও পরীদের সব খবর রাখে কিন্তু সেই গ্রামেরই এক অনাথ রাখাল ছেলে। সে গরু চরায়, বাঁশি বাজায় আর দূর থেকে দেখতে থাকে পরীদের কান্ডকারখানা। একসময় তার খুব ভালো লেগে যায় সবচেয়ে ছোট পরীটিকে। কি অপরূপ মিষ্টি চেহারা! ওকে দেখলেই রাখালের বাঁশিতে বেজে ওঠে স্বর্গীয় সব সুর। দূর থেকে পরীরা তা শোনে আর অবাক হয়ে ভাবে এমন সুন্দর সুর কে বাজায়, এ সুর তো নন্দনকাননের পাখিদেরও অজানা! তারা মুগ্ধ হয়ে শোনে, কিন্তু রাখাল থাকে আড়ালে, তাকে কেউ দেখতে পায় না।
একবার হলো কি, রাখালের মাথায় একটা দুষ্টবুদ্ধি জাগলো। পরীরা যখন স্নানে ব্যস্ত, সে চুপিচুপি এসে দাঁড়ালো সেই গাছতলাটিতে যেখানে খুলে রাখা আছে পরীদের ডানাগুলো। বেছে বেছে সব চেয়ে ছোট ডানাজোড়া নিয়ে সে লুকিয়ে রেখে দিল একটা বড় গাছের ফোকরে। তারপর ধীরে ধীরে সরে পড়ল সেখান থেকে। এখন সাতদিন পরে পরীদের যাবার সময় হলে দেখা গেল তাদের ছোটবোনের ডানাজোড়া নেই সেখানে, অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তারা সেটা পেল না।
এদিকে বাবার কড়া হুকুম, একসপ্তাহের বেশি তাদের স্বর্গ ছেড়ে থাকা চলবে না। কি করে, সবচেয়ে যে বড় পরী সে তার ছোট বোনকে বুঝিয়ে বলল, 'উপায় নেইরে বোন, আমাদের যেতেই হবে, আর গেলে পরের বছরের আগে আর আসতে পারব না। তুই বরং এখানে থেকে ডানা জোড়া ভাল করে খুঁজে দেখ, পেলেই দেশে চলে আসিস, কেমন? আমরা বাবাকে বুঝিয়ে বলব তিনি যেন রাগ না করেন'।
ছয় পরী ছোট বোনকে একা সরোবরের তীরে ফেলে রেখে তো উড়ে চলে গেল, বেচারী ছোটপরী মনের দু:খে বসে বসে কাঁদতে লাগলো। তাকে ওভাবে কাঁদতে দেখে রাখাল সাহস করে আড়াল থেকে বেরিয়ে এলো। সব শুনে সে তাকে নিজের বাসায় নিয়ে গেল, তারপর অনেকক্ষণ ধরে বাঁশি বাজিয়ে শোনাল। এই রাখালের বাঁশিই যে তাকে দূর থেকে এত আনন্দ দিয়েছে ভেবে পরীর খুব ভালো লাগলো, তাদের বন্ধুত্ব হতে দেরী হলো না।
রাখাল আর পরী গ্রামের একপ্রান্তে একটি কুঁড়েঘরে থাকে, একত্রে গরু চরায়। রাখাল বাঁশি বাজায় আর পরী ঘাঘরা উড়িয়ে নাচে, দেখে গ্রামের লোকেরা ঠিক করলো এদের বিয়ে হওয়া উচিত। রাখাল তো রাজি ছিলই, পরীও কি আর করে, রাজি হয়ে গেল। তারপর একদিন বেশ একটা উৎসবের মধ্যে দিয়ে তাদের বিয়ে হয়ে গেল।
(২)
রাখাল আর পরীর দিনগুলো বেশ সুখেই কাটে। আবার পরীর চোখ মাঝে মাঝে জলে ভরে ওঠে ফেলে আসা দিনগুলোর কথা, তার দিদিদের কথা ভেবে, কি আনন্দই না করত তারা সাতজনে। নন্দনকাননের অপূর্ব শোভা, বাবার স্নেহ, বাবা তাঁর প্রিয় মেয়েকে ছেড়ে আছেন কি করে সে কথা ভেবে অভিমানও হয়। এরকম সময়ে রাখাল তাকে বাঁশিতে মিষ্টি সুর বাজিয়ে শোনায়, পৃথিবীর, মানুষদের সব গল্প বলে, শেষে একসময় তারা সব ভুলে ঘুমিয়ে পড়ে।
ঠিক একবছর হবার আগে পরীর কোল আলো করে একটি ছেলে এলো। তাকে পাবার পরে পরী যেন যেটুকু দু:খকষ্ট ছিল তাও ভুলে গেল। দেখতে দেখতে একবছর পার হয়ে গেল। পরী তো ভুলেই গেছিল কিন্তু রাখালের মনে ছিল, তার দিদিদের আসার সময় হয়ে এলো।
রাখালের ঠিক চোখে পড়ল পরীর দিদিরা এক এক করে সরোবরের তীরে নামল। কিন্তু তারা জলে না নেমে এদিক ওদিক খুঁজতে লাগলো। রাখাল তখন তাদের সামনে গিয়ে নিজের পরিচয় দিল, তারা তো ছোটপরী ভালো আছে শুনে খুশি হয়ে তখনি রাখালের সাথে চলে এলো তাদের বাসায়। তারপর তো সাতবোনের একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কান্না, হাসি আর গল্প চলল সারারাত ধরে। ছোটপরীর ছেলেটিকে মাসীরা মিলে খুব আদর করলো।
ঠিক সাতদিন পরে যখন তাদের যাবার সময় হলো, রাখাল একফাঁকে ছুটে গিয়ে ছোটপরীর ডানাজোড়া নিয়ে এসে তার হাতে দিয়ে সব কাহিনী খুলে বলল। পরী স্তম্ভিত হয়ে শুনলো। শেষে রেগেমেগে ডানাজোড়া পরে বলল, 'তুমি যা করেছ, তার জন্যে ক্ষমা নেই। তুমি থাক এখানে তোমার ছেলে নিয়ে একা, আমি চললাম দিদিদের সাথে। তারপর সে সত্যিই সরোবরের তীরে এসে দিদিদের সাথে দেখা করে ওদের সঙ্গে উড়ে চলে গেল স্বর্গরাজ্যে তাদের বাসায়।
কিন্তু স্বর্গে এসেও শান্তি নেই। ছোটপরীর মন পড়ে আছে সরোবরের তীরের সেই পাহাড়ি গ্রামের ছোট্ট এক কুঁড়েঘরে, যেখানে আছে তার ছেলে আর সেই রাখাল। এক এক করে তার সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়তে লাগলো, সেই রাত জেগে তাদের গল্প করা, নির্জন মাঠে রাখালের বাঁশি শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়া। একটা চাতুরী রাখাল করেছিল, কিন্তু মানুষটা তো সে খারাপ নয়, চাইলে তো সে পাখাগুলো ফেরত না দিলেও পারত। স্বর্গে সব আছে, সবকিছুই সুন্দর এখানে, কিন্তু ভালবাসা নেই, বন্ধুত্ব বলে কিছু নেই। আর দু:খের স্বাদ যে একবার পেয়েছে সেই জানে একটান.........
বাকিটা পরে!!!
(১)
চারিদিকে পাহাড় ঘেরা উপত্যকার মাঝে ছিল অপূর্ব সুন্দর এক সরোবর। স্বর্গও লজ্জা পায় এমন সুন্দর পরিবেশ সেখানে। সেই সরোবরের তীরে প্রতি বছর গ্রীষ্মকালে বেড়াতে আসে সাত পরী, সাত বোন। তারা ডানাগুলো একটা গাছের তলায় রেখে আনন্দ করে জলে খেলে বেড়ায়। জনশূন্য চারপাশ। ঠিক সাতদিন ধরে আনন্দ করে আবার ডানাগুলো পরে উড়ে যায় নন্দনকাননে, তাদের নিজের দেশে।
এদিকে কাছাকাছি যে কিছু গ্রাম আছে সে খবর তারা না রাখলেও পরীদের সব খবর রাখে কিন্তু সেই গ্রামেরই এক অনাথ রাখাল ছেলে। সে গরু চরায়, বাঁশি বাজায় আর দূর থেকে দেখতে থাকে পরীদের কান্ডকারখানা। একসময় তার খুব ভালো লেগে যায় সবচেয়ে ছোট পরীটিকে। কি অপরূপ মিষ্টি চেহারা! ওকে দেখলেই রাখালের বাঁশিতে বেজে ওঠে স্বর্গীয় সব সুর। দূর থেকে পরীরা তা শোনে আর অবাক হয়ে ভাবে এমন সুন্দর সুর কে বাজায়, এ সুর তো নন্দনকাননের পাখিদেরও অজানা! তারা মুগ্ধ হয়ে শোনে, কিন্তু রাখাল থাকে আড়ালে, তাকে কেউ দেখতে পায় না।
একবার হলো কি, রাখালের মাথায় একটা দুষ্টবুদ্ধি জাগলো। পরীরা যখন স্নানে ব্যস্ত, সে চুপিচুপি এসে দাঁড়ালো সেই গাছতলাটিতে যেখানে খুলে রাখা আছে পরীদের ডানাগুলো। বেছে বেছে সব চেয়ে ছোট ডানাজোড়া নিয়ে সে লুকিয়ে রেখে দিল একটা বড় গাছের ফোকরে। তারপর ধীরে ধীরে সরে পড়ল সেখান থেকে। এখন সাতদিন পরে পরীদের যাবার সময় হলে দেখা গেল তাদের ছোটবোনের ডানাজোড়া নেই সেখানে, অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তারা সেটা পেল না।
এদিকে বাবার কড়া হুকুম, একসপ্তাহের বেশি তাদের স্বর্গ ছেড়ে থাকা চলবে না। কি করে, সবচেয়ে যে বড় পরী সে তার ছোট বোনকে বুঝিয়ে বলল, 'উপায় নেইরে বোন, আমাদের যেতেই হবে, আর গেলে পরের বছরের আগে আর আসতে পারব না। তুই বরং এখানে থেকে ডানা জোড়া ভাল করে খুঁজে দেখ, পেলেই দেশে চলে আসিস, কেমন? আমরা বাবাকে বুঝিয়ে বলব তিনি যেন রাগ না করেন'।
ছয় পরী ছোট বোনকে একা সরোবরের তীরে ফেলে রেখে তো উড়ে চলে গেল, বেচারী ছোটপরী মনের দু:খে বসে বসে কাঁদতে লাগলো। তাকে ওভাবে কাঁদতে দেখে রাখাল সাহস করে আড়াল থেকে বেরিয়ে এলো। সব শুনে সে তাকে নিজের বাসায় নিয়ে গেল, তারপর অনেকক্ষণ ধরে বাঁশি বাজিয়ে শোনাল। এই রাখালের বাঁশিই যে তাকে দূর থেকে এত আনন্দ দিয়েছে ভেবে পরীর খুব ভালো লাগলো, তাদের বন্ধুত্ব হতে দেরী হলো না।
রাখাল আর পরী গ্রামের একপ্রান্তে একটি কুঁড়েঘরে থাকে, একত্রে গরু চরায়। রাখাল বাঁশি বাজায় আর পরী ঘাঘরা উড়িয়ে নাচে, দেখে গ্রামের লোকেরা ঠিক করলো এদের বিয়ে হওয়া উচিত। রাখাল তো রাজি ছিলই, পরীও কি আর করে, রাজি হয়ে গেল। তারপর একদিন বেশ একটা উৎসবের মধ্যে দিয়ে তাদের বিয়ে হয়ে গেল।
(২)
রাখাল আর পরীর দিনগুলো বেশ সুখেই কাটে। আবার পরীর চোখ মাঝে মাঝে জলে ভরে ওঠে ফেলে আসা দিনগুলোর কথা, তার দিদিদের কথা ভেবে, কি আনন্দই না করত তারা সাতজনে। নন্দনকাননের অপূর্ব শোভা, বাবার স্নেহ, বাবা তাঁর প্রিয় মেয়েকে ছেড়ে আছেন কি করে সে কথা ভেবে অভিমানও হয়। এরকম সময়ে রাখাল তাকে বাঁশিতে মিষ্টি সুর বাজিয়ে শোনায়, পৃথিবীর, মানুষদের সব গল্প বলে, শেষে একসময় তারা সব ভুলে ঘুমিয়ে পড়ে।
ঠিক একবছর হবার আগে পরীর কোল আলো করে একটি ছেলে এলো। তাকে পাবার পরে পরী যেন যেটুকু দু:খকষ্ট ছিল তাও ভুলে গেল। দেখতে দেখতে একবছর পার হয়ে গেল। পরী তো ভুলেই গেছিল কিন্তু রাখালের মনে ছিল, তার দিদিদের আসার সময় হয়ে এলো।
রাখালের ঠিক চোখে পড়ল পরীর দিদিরা এক এক করে সরোবরের তীরে নামল। কিন্তু তারা জলে না নেমে এদিক ওদিক খুঁজতে লাগলো। রাখাল তখন তাদের সামনে গিয়ে নিজের পরিচয় দিল, তারা তো ছোটপরী ভালো আছে শুনে খুশি হয়ে তখনি রাখালের সাথে চলে এলো তাদের বাসায়। তারপর তো সাতবোনের একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কান্না, হাসি আর গল্প চলল সারারাত ধরে। ছোটপরীর ছেলেটিকে মাসীরা মিলে খুব আদর করলো।
ঠিক সাতদিন পরে যখন তাদের যাবার সময় হলো, রাখাল একফাঁকে ছুটে গিয়ে ছোটপরীর ডানাজোড়া নিয়ে এসে তার হাতে দিয়ে সব কাহিনী খুলে বলল। পরী স্তম্ভিত হয়ে শুনলো। শেষে রেগেমেগে ডানাজোড়া পরে বলল, 'তুমি যা করেছ, তার জন্যে ক্ষমা নেই। তুমি থাক এখানে তোমার ছেলে নিয়ে একা, আমি চললাম দিদিদের সাথে। তারপর সে সত্যিই সরোবরের তীরে এসে দিদিদের সাথে দেখা করে ওদের সঙ্গে উড়ে চলে গেল স্বর্গরাজ্যে তাদের বাসায়।
কিন্তু স্বর্গে এসেও শান্তি নেই। ছোটপরীর মন পড়ে আছে সরোবরের তীরের সেই পাহাড়ি গ্রামের ছোট্ট এক কুঁড়েঘরে, যেখানে আছে তার ছেলে আর সেই রাখাল। এক এক করে তার সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়তে লাগলো, সেই রাত জেগে তাদের গল্প করা, নির্জন মাঠে রাখালের বাঁশি শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়া। একটা চাতুরী রাখাল করেছিল, কিন্তু মানুষটা তো সে খারাপ নয়, চাইলে তো সে পাখাগুলো ফেরত না দিলেও পারত। স্বর্গে সব আছে, সবকিছুই সুন্দর এখানে, কিন্তু ভালবাসা নেই, বন্ধুত্ব বলে কিছু নেই। আর দু:খের স্বাদ যে একবার পেয়েছে সেই জানে একটান.........
বাকিটা পরে!!!
Wednesday, 3 October 2018
লাল পরীর গল্প
লাল পরীর গল্প
পরি রাজ্যে হঠাৎ করে এক আশ্চর্য ঘটনা ঘটে গেল, আর তা হলো একজন গরিব পরির ঘরে জন্ম নিল লাল ফুটফুটে এক পরি। এর আগে কখনও পরিদের রঙ লাল দেখতে না পাওয়ার কারণে পরিরাজ্যের সকল পরিরা সেই ছোট্ট লাল পরিটাকে দেখার জন্য ভিড় করতে থাকলো।
লাল পরির মায়ের বয়স ছিল অনেক বেশি। সে বয়সের ভারে তেমন একটা কাজকর্ম করতে পারতো না, তাই তাদের সংসার খুব অভাব অনটনের মধ্যেই চলছিল। কিন’ লাল পরি জন্ম গ্রহণের পর থেকে যেন এর পরিবর্তন ঘটতে থাকলো। প্রতিদিন পরি রাজ্যের বিভিন্ন পরিরা লাল পরিকে দেখতে এসে উপঢৌকন দিয়ে যেত আর তা দিয়ে তাদের অভাবের সংসার খুব ভালোভাবেই চলতো। এভাবে যেতে যেতে লাল পরিরা একদিন অনেক ধন সম্পদের মালিক হয়ে গেলো, এমনকি তারা হয়ে গেলো পরিরাজ্যের কয়েকজন ধনীর মধ্যে একজন।
লালপরির কথা পরিরাজ্যের পরিরা ছাড়াও অন্যান্য রাজ্যের সকলেই জানতো। দৈত্য রাজ্যের কেউ যেন এই কথা জানতে না পারে সে ব্যাপারে সকলকেই নিষেধ করা ছিল। তারপরও কি কোনো কথা গোপন থাকে? লাল পরিরা এতো ধন-সম্পদের মালিক হওয়ায় হিংসুটে এক পরি লালপরির কথা জানিয়ে দিলো দৈত্য রাজ্যের খারাপ দৈত্য হিংসুং- কে।
হিংসুং ছিল দৈত্য রাজ্যের একজন পথভ্রষ্ট দৈত্য। সে দৈত্য রাজার ছোট ছেলে। খারাপ কাজকর্মের জন্য রাজা তাকে রাজ্য থেকেই বের করে দিয়েছেন। তাই সে এখন বিভিন্ন রাজ্যে গিয়ে তার অপকর্ম চালায় এবং কেউ তার ক্ষতি করতে পারে না।
লালপরি আস্তে আস্তে বড় হতে থাকলো। এলাকায় তার অনেক নাম ডাক। সবাই তাকে আদর করে পরিরানি বলে ডাকে। সে সবার থেকে আলাদা বলেই সবাই তাকে চোখে চোখেই রাখে। অনেক ধন-সম্পদের মালিক হওয়ায় তার দেখাশোনার জন্য কয়েকজন দাসীও নিযুক্ত করা হয়েছে। লালপরির আচার ব্যবহার এতটাই ভালো যে, দাসীরাও তাকে অনেক আদর যত্ন করতো।
একদিন হঠাৎ করে একজন দাসী কাজে না আসায় লালপরি খুব চিন্তিত হয়ে গেলো। কারণ ওই দাসীটা অন্যান্য দাসীদের চেয়েও পরিরাণীকে খুব বেশি ভালোবাসতো। সেই দাসীটার কোনো অসুখ হলো কিনা তা জানার জন্য সে কাউকে না জানিয়ে ঐ দাসীর বাড়ির খোঁজ করার জন্য বের হয়ে গেল। কিন’ পরিরাণী বাড়ি না চেনার কারণে পথ হারিয়ে অন্য দিকে চলে গেল।
এসব কিন’ খারাপ দৈত্য হিংসুং আড়াল থেকে দেখছিল। কারণ সেই ঐ দাসীকে আটকে রেখেছিল জঙ্গলের মধ্যে। তাছাড়া পরিরাণীকে সে বাড়ি থেকে বাইরে আনতে পারছিল না। অবশেষে হিংসুং বুদ্ধি করে পরিরাণীকে বাইরে আনতে পেরে খুব খুশি হলো এবং তাকে বন্দি করে নিয়ে গেলে দূর পাহাড়ের চূড়ায়।
লালপরিকে না পেয়ে তার বৃদ্ধ মা প্রায় মরণাপন্ন অবস’ায় বিছানায় পড়ে আছে। পরিরাণীকে কিভাবে খুঁজে পাওয়া যায় তা নিয়ে পুরো পরিরাজ্যের পরিরা অসি’র। সবাই যার যার মতো করে খুঁজছে কিন’ পরিরাণীকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে হিংসুং লালপরিকে পাহাড়ের চূড়ায় রেখে চলে এসেছে দুষ্টু পরির সাথে যুক্তি করতে। কীভাবে ধন সম্পদ হাতিয়ে নিয়ে যায় সেই যুক্তিতে তারা যখন মগ্ন ঠিক তখনই অন্যান্য পরিরা পরিরাণীকে খুঁজতে খুঁজতে সেখানে পৌঁছে গেল এবং তাদের কথাবার্তা শুনে ফেলল।
হিংসুং -এর সাথে কেউ পেরে উঠবে না বলে তারা সবাই মিলে হাজির হলো পরি রাজ্যের রাজার কাছে। রাজাকে সব ঘটনা খুলে বলায়, রাজা সেই হিংসুটে পরিটাকে ধরে নিয়ে আনলেন এবং বললেন- সে যদি না বলে পরি রানি কোথায় আছে তাহলে তাকে শূলে চড়ানো হবে। রাজার এই শাস্তির ঘোষণা শুনে হিংসুটে পরিটা সবকিছু স্বীকার করে রাজার কাছে প্রাণ ভিক্ষা চাইলো। কিন’ তার কোনো কথা রাজার মন গলাতে পারলো না।
পরিরাজ্যের রাজার সাথে দৈত্যরাজ্যের রাজার খুব ভালো সম্পর্ক ছিল তাই পরিরাজ্যের রাজা দৈত্যরাজ্যের রাজাকে বিষয়টা খুলে বললেন এবং তিনি তার ছেলে হিংসুং-কে আটক করে লাল পরিসহ বন্দীকৃত দাসীকেও ফিরিয়ে দিলেন।
লাল পরিকে ফিরে পেয়ে তার মাসহ রাজ্যের সকলেই আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলো এবং পরিরাজ্যের রাজা লাল পরির সুরক্ষার জন্য তাকে রাজপ্রাসাদে রাজকন্যার মর্যাদায় থাকার অনুমতি দিলেন।
পরি রাজ্যে হঠাৎ করে এক আশ্চর্য ঘটনা ঘটে গেল, আর তা হলো একজন গরিব পরির ঘরে জন্ম নিল লাল ফুটফুটে এক পরি। এর আগে কখনও পরিদের রঙ লাল দেখতে না পাওয়ার কারণে পরিরাজ্যের সকল পরিরা সেই ছোট্ট লাল পরিটাকে দেখার জন্য ভিড় করতে থাকলো।
লাল পরির মায়ের বয়স ছিল অনেক বেশি। সে বয়সের ভারে তেমন একটা কাজকর্ম করতে পারতো না, তাই তাদের সংসার খুব অভাব অনটনের মধ্যেই চলছিল। কিন’ লাল পরি জন্ম গ্রহণের পর থেকে যেন এর পরিবর্তন ঘটতে থাকলো। প্রতিদিন পরি রাজ্যের বিভিন্ন পরিরা লাল পরিকে দেখতে এসে উপঢৌকন দিয়ে যেত আর তা দিয়ে তাদের অভাবের সংসার খুব ভালোভাবেই চলতো। এভাবে যেতে যেতে লাল পরিরা একদিন অনেক ধন সম্পদের মালিক হয়ে গেলো, এমনকি তারা হয়ে গেলো পরিরাজ্যের কয়েকজন ধনীর মধ্যে একজন।
লালপরির কথা পরিরাজ্যের পরিরা ছাড়াও অন্যান্য রাজ্যের সকলেই জানতো। দৈত্য রাজ্যের কেউ যেন এই কথা জানতে না পারে সে ব্যাপারে সকলকেই নিষেধ করা ছিল। তারপরও কি কোনো কথা গোপন থাকে? লাল পরিরা এতো ধন-সম্পদের মালিক হওয়ায় হিংসুটে এক পরি লালপরির কথা জানিয়ে দিলো দৈত্য রাজ্যের খারাপ দৈত্য হিংসুং- কে।
হিংসুং ছিল দৈত্য রাজ্যের একজন পথভ্রষ্ট দৈত্য। সে দৈত্য রাজার ছোট ছেলে। খারাপ কাজকর্মের জন্য রাজা তাকে রাজ্য থেকেই বের করে দিয়েছেন। তাই সে এখন বিভিন্ন রাজ্যে গিয়ে তার অপকর্ম চালায় এবং কেউ তার ক্ষতি করতে পারে না।
লালপরি আস্তে আস্তে বড় হতে থাকলো। এলাকায় তার অনেক নাম ডাক। সবাই তাকে আদর করে পরিরানি বলে ডাকে। সে সবার থেকে আলাদা বলেই সবাই তাকে চোখে চোখেই রাখে। অনেক ধন-সম্পদের মালিক হওয়ায় তার দেখাশোনার জন্য কয়েকজন দাসীও নিযুক্ত করা হয়েছে। লালপরির আচার ব্যবহার এতটাই ভালো যে, দাসীরাও তাকে অনেক আদর যত্ন করতো।
একদিন হঠাৎ করে একজন দাসী কাজে না আসায় লালপরি খুব চিন্তিত হয়ে গেলো। কারণ ওই দাসীটা অন্যান্য দাসীদের চেয়েও পরিরাণীকে খুব বেশি ভালোবাসতো। সেই দাসীটার কোনো অসুখ হলো কিনা তা জানার জন্য সে কাউকে না জানিয়ে ঐ দাসীর বাড়ির খোঁজ করার জন্য বের হয়ে গেল। কিন’ পরিরাণী বাড়ি না চেনার কারণে পথ হারিয়ে অন্য দিকে চলে গেল।
এসব কিন’ খারাপ দৈত্য হিংসুং আড়াল থেকে দেখছিল। কারণ সেই ঐ দাসীকে আটকে রেখেছিল জঙ্গলের মধ্যে। তাছাড়া পরিরাণীকে সে বাড়ি থেকে বাইরে আনতে পারছিল না। অবশেষে হিংসুং বুদ্ধি করে পরিরাণীকে বাইরে আনতে পেরে খুব খুশি হলো এবং তাকে বন্দি করে নিয়ে গেলে দূর পাহাড়ের চূড়ায়।
লালপরিকে না পেয়ে তার বৃদ্ধ মা প্রায় মরণাপন্ন অবস’ায় বিছানায় পড়ে আছে। পরিরাণীকে কিভাবে খুঁজে পাওয়া যায় তা নিয়ে পুরো পরিরাজ্যের পরিরা অসি’র। সবাই যার যার মতো করে খুঁজছে কিন’ পরিরাণীকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে হিংসুং লালপরিকে পাহাড়ের চূড়ায় রেখে চলে এসেছে দুষ্টু পরির সাথে যুক্তি করতে। কীভাবে ধন সম্পদ হাতিয়ে নিয়ে যায় সেই যুক্তিতে তারা যখন মগ্ন ঠিক তখনই অন্যান্য পরিরা পরিরাণীকে খুঁজতে খুঁজতে সেখানে পৌঁছে গেল এবং তাদের কথাবার্তা শুনে ফেলল।
হিংসুং -এর সাথে কেউ পেরে উঠবে না বলে তারা সবাই মিলে হাজির হলো পরি রাজ্যের রাজার কাছে। রাজাকে সব ঘটনা খুলে বলায়, রাজা সেই হিংসুটে পরিটাকে ধরে নিয়ে আনলেন এবং বললেন- সে যদি না বলে পরি রানি কোথায় আছে তাহলে তাকে শূলে চড়ানো হবে। রাজার এই শাস্তির ঘোষণা শুনে হিংসুটে পরিটা সবকিছু স্বীকার করে রাজার কাছে প্রাণ ভিক্ষা চাইলো। কিন’ তার কোনো কথা রাজার মন গলাতে পারলো না।
পরিরাজ্যের রাজার সাথে দৈত্যরাজ্যের রাজার খুব ভালো সম্পর্ক ছিল তাই পরিরাজ্যের রাজা দৈত্যরাজ্যের রাজাকে বিষয়টা খুলে বললেন এবং তিনি তার ছেলে হিংসুং-কে আটক করে লাল পরিসহ বন্দীকৃত দাসীকেও ফিরিয়ে দিলেন।
লাল পরিকে ফিরে পেয়ে তার মাসহ রাজ্যের সকলেই আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলো এবং পরিরাজ্যের রাজা লাল পরির সুরক্ষার জন্য তাকে রাজপ্রাসাদে রাজকন্যার মর্যাদায় থাকার অনুমতি দিলেন।
Sunday, 30 September 2018
নীল পরীর গল্প
নীল পরীর গল্প↙www.facebook.com/rupkotha.golpokotha2017
নীল অপরাজিতা ফুল থেকে একটি পরী বেরিয়ে এলো। ফুলুফুলু রাজ্যের সবাই তো অবাক! ভাবছ ফুলুফুলু রাজ্যটা আবার কিরকম? বলছি শোন ফুলুফুলু রাজ্যে শুধু ফুলেরা বাস করে। তাদের প্রতিবেশী রাজ্যে হলো পুখুপুখু। এই রাজ্যে শুধু পাখিরা বাস করে।
এখন বলছি সেই পরীর কথা। পরীটির চোখের রঙ নীল। পুরো শরীরে রয়েছে তার নীল রঙের আভা। পুখুপুখু রাজ্যেও এই পরীর কথা পৌঁছে গেল।
বুলবুলি পাখি পরীর সঙ্গে দেখা করতে এলো। কিন্তু পরী কারো সঙ্গে কোনো কথা বলল না। এভাবে এক সপ্তাহ কেটে গেল। একদিন হঠাৎ পরী গান গাইল।
শিউলি ফুলপরীর কাছে এসে বলল, বাহ! তুমি তো অনেক ভালো গান গাও। কি নাম গো তোমার?
আমার নাম নীলপরী।
তুমি ফুলুফুলু রাজ্যে কেন এসেছ?
আমি ফুল হতে এসেছি।
মানে?
আমার খুব ইচ্ছা আমি ফুল হব। তারপর সবাই আমাকে ডাকবে নীল ফুলপরী।
তুমি ফুল কেন হতে চাও?
কারণ ফুলেরা অনেক নিষ্পাপ হয়। তারা কখনো কারো মনে কষ্ট দেয় না। ফুলেরা সবাইকে ভালোবাসতে পারে। ধনী, গরিব, ছোট, বড় সব মানুষকে তারা আদর ও সম্মান করে। আর জানো পৃথিবীতে যে কোনো উৎসবে সবাই ফুলকে অলঙ্কার করে সাজে। আবার ভালোবাসার সম্পর্কও বিনিময় করে ফুল দিয়ে।
এসব কথা শুনে শিউলি ফুল তো অনেক খুশি।
মনের আনন্দে সে বলল- দারুণ খবর শুনলাম। আচ্ছা নীলপরী তুমি কোথায় বাস কর?
আমি পৃথিবী গ্রহে বাস করি। আর যে দেশে থাকি সেই দেশের নাম বাংলাদেশ।
আচ্ছা তোমাদের দেশে কী কী উৎসব হয়?
ঈদ, পূজা, বড়দিন, নববর্ষ পালন। আর জন্মদিনেও ধুমধাম করে পালন করা হয়।
সব উৎসবে কি আমাদের দেখতে পাও?
অবশ্যই। তোমাদের অলঙ্কার করেই তো সবাই সাজে। আবার উৎসবগুলোয় একে অন্যকে ফুলও উপহার দেয়।
অসাধারণ। আমরা অনেক ভাগ্যবান, নীলপরী।
হুম। আমিও তাই মনে করি।
আচ্ছা তুমি ফুল হয়ে কি করবে?
সবার মাঝে ভালোবাসা ছড়িয়ে দেব। যাতে কেউ কারো সঙ্গে হিংসা না করে। ঝগড়া-বিবাদ না করে। সবাই যেন সুখে-শান্তিতে বাস করতে পারে। তাই ফুল হবো।
বাহ! দারুণ কথা! শোন তুমি আর তিনদিন আমাদের রাজ্যে থাকলে ফুল হয়ে যাবে।
ধন্যবাদ শিউলি ফুল।
নীল ফুলপরী অপেক্ষা করতে লাগল। এভাবে তিনদিন কাটল।
তারপর এক ভোরে নীলপরী ফুল হলো। তার ডানায় সাদা বেলিফুল ফুটল। মাথার মুকুটে ফুটল লাল গোলাপ। আর পুরো শরীরে ফুটল নীল অপরাজিতা ফুল।
এই খবর পুখুপুখু রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ল। পুখুপুখু রাজ্য থেকে শালিক, দোয়েল, বুলবুলি সবাই নীলপরীকে দেখতে এলো।
বুলবুলি পরীকে জিজ্ঞাসা করল-
কি নাম তোমার পরী?
আমি নীল ফুলপরী।
নীল অপরাজিতা ফুল থেকে একটি পরী বেরিয়ে এলো। ফুলুফুলু রাজ্যের সবাই তো অবাক! ভাবছ ফুলুফুলু রাজ্যটা আবার কিরকম? বলছি শোন ফুলুফুলু রাজ্যে শুধু ফুলেরা বাস করে। তাদের প্রতিবেশী রাজ্যে হলো পুখুপুখু। এই রাজ্যে শুধু পাখিরা বাস করে।
এখন বলছি সেই পরীর কথা। পরীটির চোখের রঙ নীল। পুরো শরীরে রয়েছে তার নীল রঙের আভা। পুখুপুখু রাজ্যেও এই পরীর কথা পৌঁছে গেল।
বুলবুলি পাখি পরীর সঙ্গে দেখা করতে এলো। কিন্তু পরী কারো সঙ্গে কোনো কথা বলল না। এভাবে এক সপ্তাহ কেটে গেল। একদিন হঠাৎ পরী গান গাইল।
শিউলি ফুলপরীর কাছে এসে বলল, বাহ! তুমি তো অনেক ভালো গান গাও। কি নাম গো তোমার?
আমার নাম নীলপরী।
তুমি ফুলুফুলু রাজ্যে কেন এসেছ?
আমি ফুল হতে এসেছি।
মানে?
আমার খুব ইচ্ছা আমি ফুল হব। তারপর সবাই আমাকে ডাকবে নীল ফুলপরী।
তুমি ফুল কেন হতে চাও?
কারণ ফুলেরা অনেক নিষ্পাপ হয়। তারা কখনো কারো মনে কষ্ট দেয় না। ফুলেরা সবাইকে ভালোবাসতে পারে। ধনী, গরিব, ছোট, বড় সব মানুষকে তারা আদর ও সম্মান করে। আর জানো পৃথিবীতে যে কোনো উৎসবে সবাই ফুলকে অলঙ্কার করে সাজে। আবার ভালোবাসার সম্পর্কও বিনিময় করে ফুল দিয়ে।
এসব কথা শুনে শিউলি ফুল তো অনেক খুশি।
মনের আনন্দে সে বলল- দারুণ খবর শুনলাম। আচ্ছা নীলপরী তুমি কোথায় বাস কর?
আমি পৃথিবী গ্রহে বাস করি। আর যে দেশে থাকি সেই দেশের নাম বাংলাদেশ।
আচ্ছা তোমাদের দেশে কী কী উৎসব হয়?
ঈদ, পূজা, বড়দিন, নববর্ষ পালন। আর জন্মদিনেও ধুমধাম করে পালন করা হয়।
সব উৎসবে কি আমাদের দেখতে পাও?
অবশ্যই। তোমাদের অলঙ্কার করেই তো সবাই সাজে। আবার উৎসবগুলোয় একে অন্যকে ফুলও উপহার দেয়।
অসাধারণ। আমরা অনেক ভাগ্যবান, নীলপরী।
হুম। আমিও তাই মনে করি।
আচ্ছা তুমি ফুল হয়ে কি করবে?
সবার মাঝে ভালোবাসা ছড়িয়ে দেব। যাতে কেউ কারো সঙ্গে হিংসা না করে। ঝগড়া-বিবাদ না করে। সবাই যেন সুখে-শান্তিতে বাস করতে পারে। তাই ফুল হবো।
বাহ! দারুণ কথা! শোন তুমি আর তিনদিন আমাদের রাজ্যে থাকলে ফুল হয়ে যাবে।
ধন্যবাদ শিউলি ফুল।
নীল ফুলপরী অপেক্ষা করতে লাগল। এভাবে তিনদিন কাটল।
তারপর এক ভোরে নীলপরী ফুল হলো। তার ডানায় সাদা বেলিফুল ফুটল। মাথার মুকুটে ফুটল লাল গোলাপ। আর পুরো শরীরে ফুটল নীল অপরাজিতা ফুল।
এই খবর পুখুপুখু রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ল। পুখুপুখু রাজ্য থেকে শালিক, দোয়েল, বুলবুলি সবাই নীলপরীকে দেখতে এলো।
বুলবুলি পরীকে জিজ্ঞাসা করল-
কি নাম তোমার পরী?
আমি নীল ফুলপরী।
রাজা ও রাজকন্যা
রাজা ও রাজকন্যা এর গল্প
এক দেশে ছিল এক রাজা। তিনি অনেক ক্ষমতাধর হয়েও সোমগিরির রাজা হিসেবে ছিলেন ভীষণ দয়ালু। দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি তার ছিল অসীম ভালবাসা। প্রজাদের সুখ-দুঃখ আনন্দ-বেদনা নিয়েই তিনি সারাক্ষণ ভাবতেন। ফলে সেই রাজ্যের মানুষেরা ছিল খুব সুখি। কোনো কিছুর অভাব ছিল না তাদের। তারাও তাদের রাজাকে প্রাণের চেয়ে বেশি ভালোবাসতেন। এত কিছু হলে কী হবে! এত শক্তি যে রাজার, এত সম্পদে পরিপূর্ণ যারভান্ডার, এত বিশাল আরমহৎ যারমন, সেই মনের গভীর কোণে ছিল এক নিদারুণ বেদনা। দারুণ অসুখি ছিলেন সেই রাজা। সব থেকেও তার যেন কিছুই নেই। তিনি যেন ভীষণ একা। সারাদিন আনমনা হয়ে থাকেন। কারণ রাজার একমাত্র সন্তান, রাজ্যের রাজকন্যা খুব অসুস্থ। সে দাঁড়াতেপারে না, বসতে পারে না। কথাও বলতেপারে না। দিন রাত কেবলই তাকে বিছানায় শুয়ে থাকতেহয়। রাজকন্যার বয়স পনের হলেও, তাকে দেখতে এখনও শিশুটির মতোইলাগে। ভীষণ কষ্টতার। সবার মতো সে চলাফেরা করতে পারেনা, মনের কথা বলার কোনো ভাষাও নেই তার। ক্ষুধা পেলেও কাউকে জানাতে পারেনা। জীবিত থেকেও সেযেন মৃত। সবার মাঝে থেকেও সে যেন সবার থেকে দূরে। দিন যায়, মাস যায়। ঘুরতে ঘুরতে কয়েকটা বছরও চলে যায়। রাজ্যেরসব বড় বড় ডাক্তার, কবিরাজ, হেকিম-বৈদ্যদের পালা শেষ। দূর-দূরান্তের রাজ্য থেকেও বড় বড় ডাক্তারদের পক্সিখরাজ ঘোড়ায় করে নিয়েআসা হল। কিন্তুকিছুতেই কিছুহল না। সকলেরই এক কথা। এঅসুখ কিছুতেই সারবার নয়। শেষেরাজা আর কী করেন! মনের দুঃখে যেন সব কিছুই ভুলে গেলেন। ভুলে গেলেন তার প্রাণপ্রিয় দেশের কথা, প্রজাদের কথা, এমনকি ভুলে গেলেন আহার-নিদ্রার কথাও। তারপর একদিন রাতের অন্ধকারেকাউকেকিছুনা বলে বেরিয়ে পড়লেন রাজপ্রাসাদ থেকে। সবাই যখন গভীর ঘুমেঅচেতন, তখন পোশাক পাল্টে চলে গেলেন রাজ্য ছেড়ে। দিন যায়, মাস যায়, কেউ আর রাজার কোনো সন্ধান পায় না। ঘুরতে ঘুরতে বছরখানেক পরে রাজা এসে পড়লেন এক জঙ্গলে। সে কী ভয়ংকর জঙ্গল! বাঘ, ভাল্লুক আর নানা বিষাক্ত সাপে পরিপূর্ণ সেই জঙ্গল। এদিকে রাজার ভীষণ ক্ষুধা পেয়েগেল। খাদ্যের সন্ধানে রাজা ঘুরে বেড়াতে থাকেন এদিকে সেদিকে। কিন্তুবনের ভেতরে এত গাছ, কোনো গাছে কোনো ফল নেই। অনাহারে-তৃষ্ণায় রাজার প্রাণ যায় যায়। শেষেক্লান্ত হয়ে এক গাছের নিচে বসে পড়লেন রাজা। ঠিক সেই সময় গাছের পাশ দিয়ে কলসি কাঁখেযাচ্ছিল এক ছোট্ট মেয়ে। কী সুন্দর মিষ্টি দেখতে! ছোট্টফুটফুটে গোলাকার মুখে দুটি বড় বড় চোখ। আর সেই চোখে যেন রাজ্যের কৌতূহল। রাজা তো ভীষণ অবাক। কী আজব ব্যাপার! এই ভয়ঙ্কর জঙ্গলে এত সুন্দর ছোট্ট মেয়েএল কোথা থেকে? রাজা মেয়েটিকে ডাকলেন। মানুষের কন্ঠ শুনেমেয়েটি তো প্রথমে অবাক। পরে রাজাকে দেখতেপেয়ে এগিয়ে গেল। মেয়েটি এগিয়েযেতেই রাজা বললেন-“মা, দারুণ তৃষ্ণা পেয়েছে। একটুজল খাওয়াবে?” মেয়েটি জল দিতেই রাজা যেন প্রাণে বাঁচলেন। তারপর বললেন, “কে তুমি মা? এই ভয়ঙ্করজঙ্গলেএকা একা কী করছ? এখানে এলে-ই বা কোথা থেকে?” মেয়েটি জানাল, এই জঙ্গলের মধ্যেই একটা ছোট্টকুটিরে মেয়েটি তার মায়ের সঙ্গে থাকে। বাবা মারা গিয়েছেন জন্মের আগেই। আগে মা আর মেয়ে দুজনে জঙ্গল থেকেফুল তুলে মালা গেঁথেবিক্রি করত। মা অসুস্থ বলে, এখন তাকে একা-একাই সব কাজ করতে হয়। সারাদিন ফুলবিক্রি করেপানি নিয়েবাড়ি ফিরছিল মেয়েটি। আরতখনই রাজার সঙ্গে দেখা। মেয়েটির কথা শুনে ভীষণ দুঃখ হল রাজার। এত ছোট্ট একটি মেয়ে, অথচ কত কষ্টেরজীবন তার! মেয়েটির মাথায় হাত বুলিয়েদিলেন রাজা। এই অভাবিত স্নেহে মেয়েটি একেবারে বিগলিত হয়ে পড়ল। সে কখনও তার বাবাকে দেখেনি। এই লোকটিকে দেখে তারনিজের বাবার কথা মনে পড়েগেল। বাড়ির পাশে তার বয়সী মেয়েদের সে দেখেছে, তাদের বাবারা তাদের কত আদরকরে। মেলা থেকে কত কী কিনে এনে দেয়। কী সুন্দর বাড়িতে ঢুকেই ‘মা’, ‘মা’ বলে ডাকতেথাকে। কই, তাকে তো কেউএভাবেডাকে না। কতদিন সে লুকিয়ে লুকিয়ে কেঁদেছে। আজ এই অপরিচিত লোকটিকে দেখে তারমনেহল, তার বাবা বুঝি এমনই ছিল। তার বাবা থাকলেতাকে বুঝি এভাবেই মা বলে ডাকত! চোখ দুটো ছলছল করেউঠল মেয়েটির। সে রাজাকে বলল, “চলুন আমাদের বাড়িতে। আমার মা আপনাকে দেখেখুব খুশি হবেন।” মেয়েটির কথায় রাজা কেমন যেন অভিভূত হয়েগেলেন। মেয়েটিরসঙ্গে তাদের বাড়িতে গিয়েদেখেন, একটি জীর্ণ পর্ণকুটির। ভেতরে একটা পাটি বিছিয়ে শুয়ে আছে এক অসুস্থ নারী। মেয়েটি মায়ের সঙ্গেরাজার পরিচয় করিয়ে দিল। মেয়েটির মায়ের সঙ্গে অনেক কথা হল রাজার। রাজা কিন্তুনিজের পরিচয় দিলেন না। কেউ বুঝতেই পারল না যে, তিনি আসলে একজন পরাক্রমশালী রাজা। কথা প্রসঙ্গে রাজা জানলেন, এই মেয়েটির জন্ম আর তারনিজের মেয়ের জন্ম একই দিনে। ভীষণ কৌতহল হল রাজার। মেয়েটির প্রতি তার আরও তীব্র মমতা তৈরি হল। সে সারাক্ষণ মেয়েটির সঙ্গে সঙ্গে থাকে। তার সঙ্গে গল্প...
বাকিতার জন্যে সাথেই থাকো।
এক দেশে ছিল এক রাজা। তিনি অনেক ক্ষমতাধর হয়েও সোমগিরির রাজা হিসেবে ছিলেন ভীষণ দয়ালু। দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি তার ছিল অসীম ভালবাসা। প্রজাদের সুখ-দুঃখ আনন্দ-বেদনা নিয়েই তিনি সারাক্ষণ ভাবতেন। ফলে সেই রাজ্যের মানুষেরা ছিল খুব সুখি। কোনো কিছুর অভাব ছিল না তাদের। তারাও তাদের রাজাকে প্রাণের চেয়ে বেশি ভালোবাসতেন। এত কিছু হলে কী হবে! এত শক্তি যে রাজার, এত সম্পদে পরিপূর্ণ যারভান্ডার, এত বিশাল আরমহৎ যারমন, সেই মনের গভীর কোণে ছিল এক নিদারুণ বেদনা। দারুণ অসুখি ছিলেন সেই রাজা। সব থেকেও তার যেন কিছুই নেই। তিনি যেন ভীষণ একা। সারাদিন আনমনা হয়ে থাকেন। কারণ রাজার একমাত্র সন্তান, রাজ্যের রাজকন্যা খুব অসুস্থ। সে দাঁড়াতেপারে না, বসতে পারে না। কথাও বলতেপারে না। দিন রাত কেবলই তাকে বিছানায় শুয়ে থাকতেহয়। রাজকন্যার বয়স পনের হলেও, তাকে দেখতে এখনও শিশুটির মতোইলাগে। ভীষণ কষ্টতার। সবার মতো সে চলাফেরা করতে পারেনা, মনের কথা বলার কোনো ভাষাও নেই তার। ক্ষুধা পেলেও কাউকে জানাতে পারেনা। জীবিত থেকেও সেযেন মৃত। সবার মাঝে থেকেও সে যেন সবার থেকে দূরে। দিন যায়, মাস যায়। ঘুরতে ঘুরতে কয়েকটা বছরও চলে যায়। রাজ্যেরসব বড় বড় ডাক্তার, কবিরাজ, হেকিম-বৈদ্যদের পালা শেষ। দূর-দূরান্তের রাজ্য থেকেও বড় বড় ডাক্তারদের পক্সিখরাজ ঘোড়ায় করে নিয়েআসা হল। কিন্তুকিছুতেই কিছুহল না। সকলেরই এক কথা। এঅসুখ কিছুতেই সারবার নয়। শেষেরাজা আর কী করেন! মনের দুঃখে যেন সব কিছুই ভুলে গেলেন। ভুলে গেলেন তার প্রাণপ্রিয় দেশের কথা, প্রজাদের কথা, এমনকি ভুলে গেলেন আহার-নিদ্রার কথাও। তারপর একদিন রাতের অন্ধকারেকাউকেকিছুনা বলে বেরিয়ে পড়লেন রাজপ্রাসাদ থেকে। সবাই যখন গভীর ঘুমেঅচেতন, তখন পোশাক পাল্টে চলে গেলেন রাজ্য ছেড়ে। দিন যায়, মাস যায়, কেউ আর রাজার কোনো সন্ধান পায় না। ঘুরতে ঘুরতে বছরখানেক পরে রাজা এসে পড়লেন এক জঙ্গলে। সে কী ভয়ংকর জঙ্গল! বাঘ, ভাল্লুক আর নানা বিষাক্ত সাপে পরিপূর্ণ সেই জঙ্গল। এদিকে রাজার ভীষণ ক্ষুধা পেয়েগেল। খাদ্যের সন্ধানে রাজা ঘুরে বেড়াতে থাকেন এদিকে সেদিকে। কিন্তুবনের ভেতরে এত গাছ, কোনো গাছে কোনো ফল নেই। অনাহারে-তৃষ্ণায় রাজার প্রাণ যায় যায়। শেষেক্লান্ত হয়ে এক গাছের নিচে বসে পড়লেন রাজা। ঠিক সেই সময় গাছের পাশ দিয়ে কলসি কাঁখেযাচ্ছিল এক ছোট্ট মেয়ে। কী সুন্দর মিষ্টি দেখতে! ছোট্টফুটফুটে গোলাকার মুখে দুটি বড় বড় চোখ। আর সেই চোখে যেন রাজ্যের কৌতূহল। রাজা তো ভীষণ অবাক। কী আজব ব্যাপার! এই ভয়ঙ্কর জঙ্গলে এত সুন্দর ছোট্ট মেয়েএল কোথা থেকে? রাজা মেয়েটিকে ডাকলেন। মানুষের কন্ঠ শুনেমেয়েটি তো প্রথমে অবাক। পরে রাজাকে দেখতেপেয়ে এগিয়ে গেল। মেয়েটি এগিয়েযেতেই রাজা বললেন-“মা, দারুণ তৃষ্ণা পেয়েছে। একটুজল খাওয়াবে?” মেয়েটি জল দিতেই রাজা যেন প্রাণে বাঁচলেন। তারপর বললেন, “কে তুমি মা? এই ভয়ঙ্করজঙ্গলেএকা একা কী করছ? এখানে এলে-ই বা কোথা থেকে?” মেয়েটি জানাল, এই জঙ্গলের মধ্যেই একটা ছোট্টকুটিরে মেয়েটি তার মায়ের সঙ্গে থাকে। বাবা মারা গিয়েছেন জন্মের আগেই। আগে মা আর মেয়ে দুজনে জঙ্গল থেকেফুল তুলে মালা গেঁথেবিক্রি করত। মা অসুস্থ বলে, এখন তাকে একা-একাই সব কাজ করতে হয়। সারাদিন ফুলবিক্রি করেপানি নিয়েবাড়ি ফিরছিল মেয়েটি। আরতখনই রাজার সঙ্গে দেখা। মেয়েটির কথা শুনে ভীষণ দুঃখ হল রাজার। এত ছোট্ট একটি মেয়ে, অথচ কত কষ্টেরজীবন তার! মেয়েটির মাথায় হাত বুলিয়েদিলেন রাজা। এই অভাবিত স্নেহে মেয়েটি একেবারে বিগলিত হয়ে পড়ল। সে কখনও তার বাবাকে দেখেনি। এই লোকটিকে দেখে তারনিজের বাবার কথা মনে পড়েগেল। বাড়ির পাশে তার বয়সী মেয়েদের সে দেখেছে, তাদের বাবারা তাদের কত আদরকরে। মেলা থেকে কত কী কিনে এনে দেয়। কী সুন্দর বাড়িতে ঢুকেই ‘মা’, ‘মা’ বলে ডাকতেথাকে। কই, তাকে তো কেউএভাবেডাকে না। কতদিন সে লুকিয়ে লুকিয়ে কেঁদেছে। আজ এই অপরিচিত লোকটিকে দেখে তারমনেহল, তার বাবা বুঝি এমনই ছিল। তার বাবা থাকলেতাকে বুঝি এভাবেই মা বলে ডাকত! চোখ দুটো ছলছল করেউঠল মেয়েটির। সে রাজাকে বলল, “চলুন আমাদের বাড়িতে। আমার মা আপনাকে দেখেখুব খুশি হবেন।” মেয়েটির কথায় রাজা কেমন যেন অভিভূত হয়েগেলেন। মেয়েটিরসঙ্গে তাদের বাড়িতে গিয়েদেখেন, একটি জীর্ণ পর্ণকুটির। ভেতরে একটা পাটি বিছিয়ে শুয়ে আছে এক অসুস্থ নারী। মেয়েটি মায়ের সঙ্গেরাজার পরিচয় করিয়ে দিল। মেয়েটির মায়ের সঙ্গে অনেক কথা হল রাজার। রাজা কিন্তুনিজের পরিচয় দিলেন না। কেউ বুঝতেই পারল না যে, তিনি আসলে একজন পরাক্রমশালী রাজা। কথা প্রসঙ্গে রাজা জানলেন, এই মেয়েটির জন্ম আর তারনিজের মেয়ের জন্ম একই দিনে। ভীষণ কৌতহল হল রাজার। মেয়েটির প্রতি তার আরও তীব্র মমতা তৈরি হল। সে সারাক্ষণ মেয়েটির সঙ্গে সঙ্গে থাকে। তার সঙ্গে গল্প...
বাকিতার জন্যে সাথেই থাকো।
অত্যাচারী রাজা
অত্যাচারী বাদশাহ এর গল্প
এক দেশে এক অত্যাচারী বাদশাহ ছিলেন। বিভিন্ন রকমের অত্যাচার তিনি করতেন। লোকজনের ঘোড়া-গাধা জোর করে কেড়ে নিতেন। বাদশাহ একদিন সৈন্যসামন্ত সঙ্গে নিয়ে শিকার করতে গেলেন। দলবল নিয়ে শিকার করতে আসা রাজাদের একটা অভিজাত্য এবং এটা একটা বড় উৎসব। রাজা একা একা একটা শিকারের পেছনে ধাওয়া করতে করতে অনেকদূর চলে গেলেন। তাঁর অন্য কোনদিকে খেয়াল নেই।
তখন সন্ধা। রাজা টের পেলেন বনের মাথায় ঘন আঁধার নামছে। সঙ্গেকোনো অনুচর নেই। সম্পূর্ণ অপরিচিত স্থান। তিনি কাছাকাছি এক গ্রামেগিয়ে আশ্রয় নিলেন। এক ধনবান ব্যক্তির বাড়িতে রাত্রিযাপন করবেন বলে ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। কিছুক্ষণ পর তিনি দেখলেন, ধনী ব্যক্তিটি তার গাধাকে বেদম প্রহার করছে। গাধা কাতর হয়ে চিৎকার করছে। লোকটি নির্বিকার। সে গাধার একটা পা ভেঙে দিল। রাজা তাই দেখে লোকটিকে বললেন–
কী হে, অবলা জীবটাকে এভাবে পিটাচ্ছ কেন? গাধার ঠ্যাং ভেঙে তুমি নিজেরশক্তি পরীক্ষা কর?
লোকটি উত্তেজিতভাবে জবাব দিল: আমার কাজ ভালো কি মন্দ, আমিই সেটা খুব ভালোভাবেজানি। গায়েপড়ে তোমার কথা বলার কোন প্রয়োজন নেই।
জবাব শুনেবাদশাহখুব দুঃখ পেলেন। এইভাবে এইনিরীহ প্রাণটিাকে মারা কী কারণ থাকতেপারে দয়া করেসেটা আমাকে বুঝিয়ে বলবে কি? আমারমনে হচ্ছে, তুমি যেশুধুনির্বোধতাইনয় বরং আস্ত একটা পাগল। লোকটি একথায় হেসে বলল: হ্যাঁ, আমি পাগলইবটে। তবে সব শুনলে তুমিও বুঝবে, আমি নির্বোধের মতো গাধাটার পা ভেঙে দিইনি। এরমধ্যে একটা উদ্দেশ্য আছে আমার। আমাদের বাদশাহখুব অত্যাচারী। একথা সবাই জানে। আমার সুস্থ সবল গাধাটির খবরপেলেনিশ্চয়ই তিনি জোর করেএটা নিয়েযাবেন। শুনেছি, আমাদের এইএলাকায় বাদশাহ এসেছেন। তাই গাধাটাকে বাদশাহর অত্যাচার থেকে রক্ষা করবার জন্যে খোঁড়া করেদিলাম। বাদশাহগাধাটিকে কেড়েনিয়েযাওয়ার চেয়ে খোঁড়া অবস্থায় এটা আমার কাছেথাকা অনেক ভালো। আমাদের অত্যাচারী বাদশাহকে জানাই শত ধিক! বাদশাহগ্রামবাসী লোকটির মুখে নিন্দা শুনে খুবই দুঃখ পেলেন। কোন জবাব দিলেন না। রাগে, অপমানে, দুঃখে সারারাত দুচোখের পাতা এক করতে পারেননি। ঘুমহীন রাত কাটল। ভোরেরআলো ফুটল পুব আকাশে। মৃদুবাতাসবয়ে যাচ্ছে। পাখির কলকাকলিতে মুখর চারদিক। সৈন্যসামন্ত বাদশাহকে খুজতে খুজতে সাতসকালে হাজির হল সেই গ্রামে। ধনী লোকের বাড়িরসামনেএল তারা। শত শত লোকজনের মুহূর্তে ভিড় হয়ে গেল। সুসজ্জিত ভৃত্যেরা বাদশাহর সেবায় নিয়োজিত হল। সেই বাড়ির সামনে জাঁকজমকপূর্ণ বিশাল দরবারবসে গেল। রাজ্যের প্রধান প্রধান ব্যক্তি রাজার সামনেএসেআসন গ্রহণ করলেন। রাজকীয খানাপিনার আয়োজন করা হলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই এলাকার সম্পূর্ণ পরিবেশ পালটে গেল। সৈন্যদল ওঘোড়ার পদভরে থরথর করে কাঁপতে লাগল সেই এলাকা।
বাড়িরসেই লোকটি ব্যাপারস্যাপার দেখে একেবারে থ। গতরাতেস্বয়ং বাদশাহ ছিলেন তার অতিথি। অর্থাৎ বিপদ ঘনিয়েএসেছে। বাদশাহ ডেকে পাঠালেন লোকটিকে। ধরে বেঁধে তাকে আনা হল বাদশাহ’র সামনে। লোকটি বুঝল, তারআত্মরক্ষার আর কোন উপায় নেই। এই মুহূর্তেই তার জীবন শেষ হবে। আর ভয় করা বৃথা। কারণ উদ্যত তরবারির নিচেই মানবের ভাষা অধিকতর শক্তিশালী হয়েথাকে।
তাই লোকটি সাহসের সঙ্গে বলল– হে মহামান্য বাদশাহ, আমি একাই শুধু আপনার নিন্দা করি নাই। খবর নিয়ে দেখুন, জনসাধারণ সকলেই একই কথা বলে থাকে। আমাকে সহজেই হত্যা করা আপনারপক্ষেসম্ভব। আমার কথায় আপনি মনে আঘাত পেয়েছেন–সেজন্য আমি দুঃখিত। কিন্তু আপনার উচিৎ হবে ভালো কাজ করা– যেন কেউ আপনার বদনাম করতে না পারে। অন্যায় করে কখনই সুনাম অর্জন করা সম্ভব নয়। আপনার কর্মচারীরা সারাক্ষণ আপনার গুণকীর্তন করে থাকে। এতে রাজার সম্মান বৃদ্ধি পায় না। প্রজারা যদি বাদশাহ’র সুনাম করে, তাতেই বাদশাহ’র সম্মান বাড়ে। বাদশাহ এই সাহসী সত্যকথা শুনে দারুন উদ্দীপ্ত হলেন। লোকটিকে মুক্ত করে দিলেন। সকলের উদ্দেশ্যে বললেন: আমি আজথেকে চেষ্টা করব ন্যায়পরায়ন, সুশাসক হতে। আমি চাই একজন ভালো বাদশাহ হতে। যেন আমার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে দিক দিগন্তরে।
এক দেশে এক অত্যাচারী বাদশাহ ছিলেন। বিভিন্ন রকমের অত্যাচার তিনি করতেন। লোকজনের ঘোড়া-গাধা জোর করে কেড়ে নিতেন। বাদশাহ একদিন সৈন্যসামন্ত সঙ্গে নিয়ে শিকার করতে গেলেন। দলবল নিয়ে শিকার করতে আসা রাজাদের একটা অভিজাত্য এবং এটা একটা বড় উৎসব। রাজা একা একা একটা শিকারের পেছনে ধাওয়া করতে করতে অনেকদূর চলে গেলেন। তাঁর অন্য কোনদিকে খেয়াল নেই।
তখন সন্ধা। রাজা টের পেলেন বনের মাথায় ঘন আঁধার নামছে। সঙ্গেকোনো অনুচর নেই। সম্পূর্ণ অপরিচিত স্থান। তিনি কাছাকাছি এক গ্রামেগিয়ে আশ্রয় নিলেন। এক ধনবান ব্যক্তির বাড়িতে রাত্রিযাপন করবেন বলে ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। কিছুক্ষণ পর তিনি দেখলেন, ধনী ব্যক্তিটি তার গাধাকে বেদম প্রহার করছে। গাধা কাতর হয়ে চিৎকার করছে। লোকটি নির্বিকার। সে গাধার একটা পা ভেঙে দিল। রাজা তাই দেখে লোকটিকে বললেন–
কী হে, অবলা জীবটাকে এভাবে পিটাচ্ছ কেন? গাধার ঠ্যাং ভেঙে তুমি নিজেরশক্তি পরীক্ষা কর?
লোকটি উত্তেজিতভাবে জবাব দিল: আমার কাজ ভালো কি মন্দ, আমিই সেটা খুব ভালোভাবেজানি। গায়েপড়ে তোমার কথা বলার কোন প্রয়োজন নেই।
জবাব শুনেবাদশাহখুব দুঃখ পেলেন। এইভাবে এইনিরীহ প্রাণটিাকে মারা কী কারণ থাকতেপারে দয়া করেসেটা আমাকে বুঝিয়ে বলবে কি? আমারমনে হচ্ছে, তুমি যেশুধুনির্বোধতাইনয় বরং আস্ত একটা পাগল। লোকটি একথায় হেসে বলল: হ্যাঁ, আমি পাগলইবটে। তবে সব শুনলে তুমিও বুঝবে, আমি নির্বোধের মতো গাধাটার পা ভেঙে দিইনি। এরমধ্যে একটা উদ্দেশ্য আছে আমার। আমাদের বাদশাহখুব অত্যাচারী। একথা সবাই জানে। আমার সুস্থ সবল গাধাটির খবরপেলেনিশ্চয়ই তিনি জোর করেএটা নিয়েযাবেন। শুনেছি, আমাদের এইএলাকায় বাদশাহ এসেছেন। তাই গাধাটাকে বাদশাহর অত্যাচার থেকে রক্ষা করবার জন্যে খোঁড়া করেদিলাম। বাদশাহগাধাটিকে কেড়েনিয়েযাওয়ার চেয়ে খোঁড়া অবস্থায় এটা আমার কাছেথাকা অনেক ভালো। আমাদের অত্যাচারী বাদশাহকে জানাই শত ধিক! বাদশাহগ্রামবাসী লোকটির মুখে নিন্দা শুনে খুবই দুঃখ পেলেন। কোন জবাব দিলেন না। রাগে, অপমানে, দুঃখে সারারাত দুচোখের পাতা এক করতে পারেননি। ঘুমহীন রাত কাটল। ভোরেরআলো ফুটল পুব আকাশে। মৃদুবাতাসবয়ে যাচ্ছে। পাখির কলকাকলিতে মুখর চারদিক। সৈন্যসামন্ত বাদশাহকে খুজতে খুজতে সাতসকালে হাজির হল সেই গ্রামে। ধনী লোকের বাড়িরসামনেএল তারা। শত শত লোকজনের মুহূর্তে ভিড় হয়ে গেল। সুসজ্জিত ভৃত্যেরা বাদশাহর সেবায় নিয়োজিত হল। সেই বাড়ির সামনে জাঁকজমকপূর্ণ বিশাল দরবারবসে গেল। রাজ্যের প্রধান প্রধান ব্যক্তি রাজার সামনেএসেআসন গ্রহণ করলেন। রাজকীয খানাপিনার আয়োজন করা হলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই এলাকার সম্পূর্ণ পরিবেশ পালটে গেল। সৈন্যদল ওঘোড়ার পদভরে থরথর করে কাঁপতে লাগল সেই এলাকা।
বাড়িরসেই লোকটি ব্যাপারস্যাপার দেখে একেবারে থ। গতরাতেস্বয়ং বাদশাহ ছিলেন তার অতিথি। অর্থাৎ বিপদ ঘনিয়েএসেছে। বাদশাহ ডেকে পাঠালেন লোকটিকে। ধরে বেঁধে তাকে আনা হল বাদশাহ’র সামনে। লোকটি বুঝল, তারআত্মরক্ষার আর কোন উপায় নেই। এই মুহূর্তেই তার জীবন শেষ হবে। আর ভয় করা বৃথা। কারণ উদ্যত তরবারির নিচেই মানবের ভাষা অধিকতর শক্তিশালী হয়েথাকে।
তাই লোকটি সাহসের সঙ্গে বলল– হে মহামান্য বাদশাহ, আমি একাই শুধু আপনার নিন্দা করি নাই। খবর নিয়ে দেখুন, জনসাধারণ সকলেই একই কথা বলে থাকে। আমাকে সহজেই হত্যা করা আপনারপক্ষেসম্ভব। আমার কথায় আপনি মনে আঘাত পেয়েছেন–সেজন্য আমি দুঃখিত। কিন্তু আপনার উচিৎ হবে ভালো কাজ করা– যেন কেউ আপনার বদনাম করতে না পারে। অন্যায় করে কখনই সুনাম অর্জন করা সম্ভব নয়। আপনার কর্মচারীরা সারাক্ষণ আপনার গুণকীর্তন করে থাকে। এতে রাজার সম্মান বৃদ্ধি পায় না। প্রজারা যদি বাদশাহ’র সুনাম করে, তাতেই বাদশাহ’র সম্মান বাড়ে। বাদশাহ এই সাহসী সত্যকথা শুনে দারুন উদ্দীপ্ত হলেন। লোকটিকে মুক্ত করে দিলেন। সকলের উদ্দেশ্যে বললেন: আমি আজথেকে চেষ্টা করব ন্যায়পরায়ন, সুশাসক হতে। আমি চাই একজন ভালো বাদশাহ হতে। যেন আমার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে দিক দিগন্তরে।
Subscribe to:
Posts (Atom)