Monday, 13 February 2023

রুপকথার দেশের গল্প (২য় পর্ব)

 


রঞ্জনকুমার ভারী চিন্তায় পড়ে গেলো, মেঘের খোকা কে বোঝাবে কী করে যে পুরোনো রূপকথার গল্পে যতকিছু লেখা ছিলো, তার আদ্ধেক হলো গিয়ে ছেলেভোলানো বাজে কথা। ওগুলো বিশ্বাস করতে নেই মোটেই। তার ওপরে এই খোকাটা ভীষণ পাকা, সত্যি কথা শুনলেও বিশ্বাস করবে না। তাই সে বুদ্ধি করে বললো,
“ তাই যদি বলো তো , রূপকথার গল্পে তো কোথ্থাও লেখা নেই যে মেঘেদের ছানারাও কথা বলতে পারে, হাসতে পারে, কাঁদতে পারে। সেখানে তো শুধুই লেখা যে মেঘের দল গুরগুর করে, আর বৃষ্টি হয়ে সবকিছু জলে ভিজিয়ে দেয়।“
খোকা মেঘ তো রেগেই আগুন,
“ ওমা, ওসব আবার কেমনধারা কথা, দুগ্গাপুজোর সময় দেখনি বুঝি সারা আকাশ জুড়ে কেমন হেসে উঠি আমরা। তারপর মনে করো বৃষ্টি হওয়ার আগে সবাই মিলে সাবধান করি তোমাদের, ওগো কে কোথায় আছো, ঘরে ফেরো গো, ঘরে ফেরো তাড়াতাড়ি! আকাশ ঝাঁপিয়ে বৃষ্টি নিয়ে এসেছি আমরা...তা বাপু সেসব হাঁকডাক শুনে তোমরা যদি বলো যে আমরা গুরগুর করছি, তাতে আমাদের কী দোষ !”
“তাহলে, এবার বুঝলে তো, রূপকথার গল্পে যা লেখা থাকে তার সবকিছুই সত্যি হয় না। “
মেঘের খোকা বুঝতে পেরে মাথা নাড়ালো এবার, তারপর বললো,
“ আচ্ছা চলো তোমায় দেখিয়ে দিই রামধনুর কারখানা কোথায় ।”
এরপর মেঘের খোকার দেখানো পথ ধরে রঞ্জনকুমার সোজা পৌছে গেল রামধনুর কারখানায়। আলোর পরীরা মিষ্টি রিনরিনে সুরে গান গাইতে গাইতে রামধনু বুনছিলো সেখানে। রাজকুমারকে দেখে পরী রানী লিং-টিং উড়ে এলেন তাড়াতাড়ি,
“ কে, কে ওখানে ? কী চাও তুমি ?”
রঞ্জনকুমার একটু ভয়ে ভয়ে বললো,
“ পেন্নাম হই পরী রানী, আমি রাজপুত্র রঞ্জনকুমার।“
রঞ্জনকুমার তাকে পেন্নাম করলো, এত সম্মান দিয়ে কথা বললো, এসব দেখে লিং-টিং ভারী খুশি হলেন। বড়োদের সম্মান দিয়ে কথা বলে যারা তারা ভালো ঘরের ছেলেমেয়ে, একথা কে না জানে ! কাজেই লিং-টিং হাসিমুখে একটুকরো রামধনু পেতে দিয়ে বললেন,
“ এসো এসো রাজকুমার, রামধনুর আসনে বসো।“
অন্যান্য পরীরা ছুটোছুটি করে টিউলিপ ফুলের পেয়ালায় ভরে কমলা লেবুর রস নিয়ে এলো অতিথির জন্য। সেই রস খেয়ে তেষ্টা মিটলো রাজকুমারের। তারপর সে বললো,
“ পরী রানী, রূপকথার দেশের রাজকন্যা বীরবালাকে ধরে নিয়ে গেছে দুষ্টু খোক্কস। তাকে উদ্ধার করে ফিরিয়ে নিয়ে যেতেই এসেছি আমি।“
লিং-টিং ভারী অবাক হলেন সে কথা শুনে। তিনি বললেন,
“ খোক্কসটার মাথায় একটু বুদ্ধিসুদ্ধি কম আছে।মাঝে মাঝে বোকার মতো কাজকর্ম করে ফেলে সেকথা আমিও জানি। কিন্তু এত দুষ্টু তো সে নয় যে মিছিমিছি একটা রাজকন্যে কে চুরি করে পালাবে। হুমমম্, আমার মনে হয় কোথাও একটা গন্ডগোল হচ্ছে।“
“গন্ডগোলের কী আছে এতে। রাক্ষস-খোক্কসগুলো দুষ্টুমি করে রূপকথার দেশের রাজকুমারীদের ধরে নিয়ে গিয়ে রাক্ষসপুরী তে আটকে রাখবে,পরে রাজকুমারের কাছে বেদম পিটুনি খেয়ে হাউ-মাউ-খাঁউ বলে দৌড়ে পালাবে। তারপর রাজামশাই আদ্ধেক রাজত্বসহ রাজকন্যাকে তুলে দেবেন রাজকুমারের হাতে....এমনটা তো আকছারই হচ্ছে। এতে অবাক হওয়ার কী আছে ?”
লিং-টিং হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়েন প্রায়,
“কোন মান্ধাতা আমলের পুরানো রূপকথার গল্প শোনাচ্ছো রঞ্জনকুমার? বলি রাজকন্যের কী নিজের ইচ্ছে-অনিচ্ছে বলে কিছু নেই নাকি ! যাকে তাকে অমনি দিয়ে দিলেই হলো। একি মোহরের থলে নাকি ? আর তাছাড়া বুদ্ধিসুদ্ধি কম থাকে বলে রাক্ষস-খোক্কসগুলো পড়াশোনা তেমন কিছু করতে পারে না এমনিতেই। তার ওপরে মানুষের ভয়ে আজকাল বন-জঙ্গল থেকেও বেড়োতে ভয় পায়। তাই একথা বিশ্বাস করা একটু শক্তই বটে যে খোক্কস বেচারা অমনি অমনি কথা নেই বার্তা নেই বীরবালাকে চুরি করে নিয়ে পালাবে। তুমি নিজেই ভেবে দেখো।“

No comments:

Post a Comment